২০২৪-এ পৃথিবীর আকাশে 'মিনি-মুন': দ্বিতীয় চাঁদ হিসেবে দেখা যাবে
গ্রহাণু '২০২৪ পিটি৫
ভূমিকা:
আকাশের দিকে তাকালে আমরা সবাই একটাই চাঁদ দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু ২০২৪ সালে এই চিরাচরিত দৃশ্যে একটি অভাবনীয় পরিবর্তন আসতে চলেছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি নতুন আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছেন, যা আমাদের আকাশে একটি দ্বিতীয় চাঁদের মতো দেখা দেবে। এই অসাধারণ ঘটনাটি হল 'মিনি-মুন ২০২৪', যা আসলে একটি ক্ষুদ্র গ্রহাণু '২০২৪ পিটি৫'।
২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে পৃথিবীর আকাশে এক বিরল মহাজাগতিক দৃশ্যের সাক্ষী হতে যাচ্ছে সবাই। এটি একটি 'মিনি-মুন' ইভেন্ট, যেখানে একটি গ্রহাণু, যার নাম ‘২০২৪ পিটি৫’, অস্থায়ীভাবে পৃথিবীর দ্বিতীয় চাঁদ হিসেবে দেখা যাবে। যদিও এটি প্রকৃত চাঁদ নয়, তবে আকাশে চাঁদের মতোই দৃশ্যমান হবে। নভেম্বরের ২৫ তারিখ পর্যন্ত এই গ্রহাণুটি আমাদের আকাশে থাকবে। তবে খালি চোখে এটি দেখা সম্ভব হবে না, টেলিস্কোপের মাধ্যমে একে দেখা যাবে। যারা মহাকাশ নিয়ে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত সুযোগ—তারা এই গ্রহাণুটিকে শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
বাংলাদেশের আকাশ পর্যবেক্ষকদের জন্য এটি একটি অনন্য সুযোগ। আমাদের দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা চলছে। এই নতুন মহাকাশ আবিষ্কার আমাদের দেশের গবেষকদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
'মিনি-মুন' ঘটনাটি শুধু বিজ্ঞানীদের জন্যই নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও অত্যন্ত রোমাঞ্চকর। ভাবুন তো, আমরা যারা প্রতিদিন একই চাঁদ দেখে অভ্যস্ত, তারা হঠাৎ আকাশে দুটি চাঁদ দেখতে পাব! যদিও এই দ্বিতীয় 'চাঁদ' আসলে একটি গ্রহাণু, কিন্তু এর উপস্থিতি নিঃসন্দেহে আমাদের চিন্তাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
এই ব্লগ পোস্টে আমরা জানব, কীভাবে একটি ছোট্ট গ্রহাণু পৃথিবীর এত কাছে আসছে যে তা আমাদের দ্বিতীয় চাঁদ হিসেবে দেখা দেবে। আমরা আলোচনা করব এর বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব, কীভাবে এটি দেখা যাবে, এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর তাৎপর্য নিয়ে। তো চলুন, মহাকাশের এই নতুন রহস্যময় অতিথির সন্ধানে যাত্রা শুরু করি!
মিনি-মুন কী?
আমরা সবাই জানি, আমাদের পৃথিবীর একটাই চাঁদ। কিন্তু 'মিনি-মুন' কী জিনিস? এটা কি আসলেই একটা ছোট চাঁদ? চলুন, এই বিষয়ে একটু গভীরে যাই।
'মিনি-মুন ২০২৪' আসলে একটি বিশেষ মহাকাশ ঘটনা। এটা এমন একটা সময় যখন একটি ছোট গ্রহাণু পৃথিবীর খুব কাছাকাছি চলে আসে। ফলে, আকাশে তা আমাদের চাঁদের মতোই দেখায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, এটা আসল চাঁদ নয়!
আমাদের দেশের গ্রামের মানুষরা প্রায়ই বলেন, "ভাদ্র মাসে দুই চাঁদ দেখা যায়।" কিন্তু সেটা আসলে চাঁদের প্রতিবিম্ব। আর এই মিনি-মুন? এটা একেবারে আলাদা জিনিস।
মিনি-মুন ২০২৪ এর ক্ষেত্রে, আমরা দেখব গ্রহাণু '২০২৪ পিটি৫'-কে। এই গ্রহাণুটি অর্জুন গ্রহাণু বেল্ট থেকে এসে পৃথিবীর কাছাকাছি ঘুরপাক খাবে। মনে করুন, আপনি ঢাকার মিরপুরে থাকেন। হঠাৎ করে যদি আপনার ছোট্ট গ্রামের বাড়ির আত্মীয় এসে কয়েকদিন থেকে যান - ঠিক তেমনি এই গ্রহাণুও আমাদের পৃথিবীর কাছে কিছুদিনের জন্য অতিথি হয়ে থাকবে।
তবে সাধারণ চাঁদ আর এই মিনি-মুনের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে:
১. আকার: আমাদের চাঁদের তুলনায় '২০২৪ পিটি৫' অনেক ছোট।
২. দূরত্ব: সাধারণ চাঁদ পৃথিবী থেকে প্রায় ৩,৮৪,৪০০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু এই মিনি-মুন থাকবে তার চেয়েও অনেক দূরে।
৩. স্থায়িত্ব: আমাদের চাঁদ স্থায়ীভাবে পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে। কিন্তু মিনি-মুন শুধু কয়েক সপ্তাহের জন্য দেখা যাবে।
৪. উৎপত্তি: চাঁদ পৃথিবীর স্বাভাবিক উপগ্রহ। আর মিনি-মুন হল একটি বহিরাগত গ্রহাণু।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, "এই ধরনের ঘটনা খুবই বিরল। আমাদের দেশের জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের জন্য এটা একটা দারুণ সুযোগ।"
তাহলে বুঝতেই পারছেন, মিনি-মুন ২০২৪ আসলে কতটা অসাধারণ একটা ঘটনা! পরের অংশে আমরা জানব, এই অতিথি গ্রহাণু '২০২৪ পিটি৫' সম্পর্কে আরও বিস্তারিত। কী বলেন, আগ্রহী তো?
গ্রহাণু '২০২৪ পিটি৫' পরিচিতি
আমরা এতক্ষণ যে মিনি-মুনের কথা বলছিলাম, তার নাম '২০২৪ পিটি৫'। এই নামটা শুনে মনে হতে পারে কোনো রোবটের নাম! কিন্তু আসলে এটি একটি গ্রহাণুর পরিচয়। চলুন, এই অতিথি গ্রহাণু সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
প্রথমেই আসি এর জন্মস্থান নিয়ে। '২০২৪ পিটি৫' আসছে অর্জুন গ্রহাণু বেল্ট থেকে। এই বেল্টটা কোথায় জানেন? মঙ্গল গ্রহ আর বৃহস্পতি গ্রহের মাঝে। আমাদের বাংলাদেশের যেমন সুন্দরবন, তেমনি মহাকাশের এই জায়গাটা হাজার হাজার ছোট ছোট গ্রহাণুর বাস।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, এই গ্রহাণুর আকার কেমন? ঠিক কতটা বড়? দেখতে কী রকম? চলুন, এক এক করে জেনে নেই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর :
১. আকার: '২০২৪ পিটি৫' এর ব্যাস মাত্র ১০ থেকে ২০ মিটারের মধ্যে। এটা বলতে গেলে ঢাকার একটা তিন তলা বাড়ির সমান।
২. গঠন: বেশিরভাগ গ্রহাণুর মতোই এটিও সম্ভবত পাথর আর ধাতব পদার্থের তৈরি। যদি এটাকে কাছ থেকে দেখা যেত, হয়তো মনে হত বাংলাদেশের কোনো পাহাড়ি এলাকার একটা বড় পাথরের টুকরোর মতো।
৩. আকর্ষণ: এত ছোট হওয়ায় এর নিজস্ব মাধ্যাকর্ষণ শক্তি খুবই কম। ফলে, পৃথিবীর কাছাকাছি এলে এটি সহজেই আমাদের গ্রহের আকর্ষণে পড়ে যায়।
৪. গতিপথ: '২০২৪ পিটি৫' সূর্যকে ঘিরে ঘোরে। কিন্তু এবার তার পথে পড়ে যাচ্ছে আমাদের পৃথিবী। ঠিক যেমন আপনি সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন, আর হঠাৎ রাস্তায় একটা বড় গাছ দেখলেন - আপনি তার চারপাশে ঘুরে আবার নিজের পথে চলে যাবেন।
বাংলাদেশ স্পেস রিসার্চ অ্যান্ড রিমোট সেন্সিং অর্গানাইজেশন (স্পারসো) এর একজন বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, "এই ধরনের গ্রহাণু প্রায়ই পৃথিবীর কাছাকাছি আসে। কিন্তু '২০২৪ পিটি৫' বিশেষ কারণ এটি আমাদের এত কাছে আসবে যে আমরা এটাকে দেখতে পাব।"
মজার ব্যাপার হল, যদিও এই গ্রহাণু আমাদের কাছে একটা নতুন চাঁদের মতো মনে হবে, কিন্তু এটি আসলে পৃথিবীর সাথে একটু লুকোচুরি খেলছে। কিছুদিন আমাদের কাছাকাছি থেকে আবার ফিরে যাবে তার নিজের জায়গায়।
তাহলে, এবার তো জেনে গেলেন '২০২৪ পিটি৫' সম্পর্কে। পরের অংশে আমরা দেখব, কবে এবং কীভাবে এই ছোট্ট গ্রহাণু আমাদের আকাশে দ্বিতীয় চাঁদের মতো দেখা দেবে। আগ্রহী তো?