আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন: ৯,৮৭২ কোটি টাকার ধ্বংস প্রক্রিয়া
মহাকাশ বিজ্ঞানের জগতে একটি যুগান্তকারী অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে। গত ২৩ বছর ধরে মানব জাতির অগ্রগতির সাক্ষী হিসেবে কাজ করা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (International Space Station - ISS) এর জীবনকাল শেষের পথে। এই আর্টিকেলে আমরা জানব,কীভাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ধ্বংস করা হবে এবং এর পেছনে কত টাকা খরচ হতে যাচ্ছে।
ISS বা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে অবদান
- বহুমুখী গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু: জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞানসহ নানা শাখায় অভূতপূর্ব গবেষণার সুযোগ দিয়েছে।
- আন্তর্জাতিক সম্প্রীতির প্রতীক: বিভিন্ন দেশের মহাকাশচারী ও বিজ্ঞানীদের একসাথে কাজ করার অনন্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে।
- প্রযুক্তি উন্নয়নের পরীক্ষাগার: নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা ও উন্নয়নের জন্য একটি অতুলনীয় পরিবেশ প্রদান করেছে।
- ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানের ভিত্তি: চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গবেষণা ও প্রস্তুতির সুযোগ দিয়েছে।
ISS বা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ধ্বংসের কারণ
- কাঠামোগত ক্ষয়: দীর্ঘ ২৩ বছরের ব্যবহারে স্টেশনের বিভিন্ন অংশ ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে।
- চড়া রক্ষণাবেক্ষণ খরচ: বছরে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বা ৩৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয় ISS চালু রাখতে।
- আধুনিক প্রযুক্তির চাহিদা: নতুন যুগের গবেষণার জন্য আরও উন্নত সুবিধা সম্পন্ন মহাকাশ স্টেশনের প্রয়োজন।
নাসা-স্পেসএক্স চুক্তি: ৯,৮৭২ কোটি টাকার ধ্বংস পরিকল্পনা
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সম্প্রতি প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্সের সাথে একটি যুগান্তকারী চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ISS ধ্বংসের জন্য:
- চুক্তির মূল্য: ৮৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৯,৮৭২ কোটি ১০ লাখ ৩২ হাজার ৪০০ বাংলাদেশি টাকা)
- মূল লক্ষ্য: আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনকে নিরাপদে ও নিয়ন্ত্রিতভাবে ধ্বংস করা
যেভাবে ধ্বংস করা হবে ISS বা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন
আরও পড়ুনঃ SearchGPT: OpenAI-এর নতুন AI সার্চ ফিচার
ধাপ ১: মিশন সমাপ্তি
- সকল চলমান গবেষণা প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে।
- মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও গবেষণালব্ধ নমুনা পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো হবে।
ধাপ ২: কক্ষপথ থেকে অবতরণ (ডি-অরবিটিং)
- স্পেসএক্স-এর বিশেষভাবে ডিজাইন করা ড্রাগন ক্যাপসুল ব্যবহার করে ISS-কে ধীরে ধীরে পৃথিবীর দিকে নামিয়ে আনা হবে।
ধাপ ৩: নিয়ন্ত্রিত ভাবে বায়ুমণ্ডলে নিয়ে আসা
- ISS-কে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে যাতে এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে নিরাপদে প্রবেশ করে।
ধাপ ৪: বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ ও চূড়ান্ত ধ্বংস
- বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় ISS-এর অধিকাংশ অংশ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
- অবশিষ্ট ভগ্নাংশ নির্দিষ্ট স্থানে সমুদ্রে পড়বে।
- লক্ষ্যস্থল হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের নির্জন অঞ্চল, যা "পয়েন্ট নেমো" নামে পরিচিত।
পরিবেশ সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব
- সমুদ্রে পতনের স্থান নির্বাচনে চরম সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
- বিপজ্জনক পদার্থ ও তরল পদার্থ যথাযথভাবে অপসারণ করা হবে।
- স্পেসএক্স-এর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশগত ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে।
ভবিষ্যতের নতুন সম্ভাবন
- নাসা, স্পেসএক্স, এবং অন্যান্য বেসরকারি সংস্থা ইতিমধ্যে নতুন ও উন্নত মহাকাশ স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
- চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে মানুষের স্থায়ী বসতি স্থাপনের লক্ষ্যে গবেষণা আরও জোরদার করা হবে।
- বাণিজ্যিক মহাকাশ ভ্রমণের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যা ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণকে সহজলভ্য করে তুলবে।
উপসংহার
ISS-এর অবসান শুধু একটি যুগের সমাপ্তি নয়, বরং এটি মহাকাশ অন্বেষণের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। স্পেসএক্স-এর সাথে নাসার এই ঐতিহাসিক চুক্তি প্রমাণ করে যে, ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণায় সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা অপরিহার্য।
যদিও ৯ হাজার ৮৭২ কোটি টাকার এই প্রকল্প অনেকের কাছে অপচয় মনে হতে পারে, কিন্তু এর মাধ্যমে আমরা অর্জন করব অমূল্য জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। এই জ্ঞান ভবিষ্যতের মহাকাশ মিশনগুলোকে আরও নিরাপদ, কার্যকর ও টেকসই করে তুলবে।